১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্রসমাজ এই দিন আন্দোলন করে। ছাত্রদের মিছিলে পাকিস্তানি সরকার গুলি চালায়। এতে সালাম, রফিক, বরকতসহ আরো অনেক ছাত্র শহীদ হন।
এটি পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘ফেব্রুয়ারির গান’ কবিতার মূলভাব। আর এটি লোকবেতারের ‘পাঠশালা’ অনুষ্ঠানে একজন শিক্ষক পড়ে শোনান। চাইলে যে কোনো স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী কোনো গৃহ শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই এখন ঘরে বসে লোকবেতার শুনে এরকম পাঠ নিতে পারে।
লোকবেতারের এই ‘পাঠশালা’ ছড়িয়ে পড়েছে বরগুনা শহর থেকে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার প্রচারিত এই অনুষ্ঠান শোনে এই অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত অনেক শিক্ষার্থীই। যারা বাসায় গৃহশিক্ষক রাখতে পারে না।
চর কলোনি হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানের মা রওশন আরা বলেন, পাঠশালা শুরু হইলে আমার মেয়েরে নিয়া লোকবেতার শুনতে বইসা যাই। ও বই-খাতা নিয়ে বসে। আমার মেয়েরে আমি এই অনুষ্ঠান শুনাই।
নুসরাতের মা এই অনুষ্ঠানটি সপ্তাহে সাতদিনই প্রচারের দাবি জানিয়ে বলেন, এই অনুষ্ঠানটা সপ্তায় একদিন না হইয়া সাতদিন হইলে ভালো হইতো। রেডিওতে স্কুলের ম্যাডামরা প্রাইভেট মাস্টারের মতন পড়ায়। কারণ অভাবের সংসারে ওরে প্রাইভেট পড়নো সম্ভব না। সাতদিন হইলে আমাগো মতন গরিব মানুষের উপকার হইতো।
৮ নং সদর উপজেলার ঢলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল বলে, ক্লাশের পড়াই পাঠশালা অনুষ্ঠানে আলোচনা করা হয়। এতে আমাদের পড়া বুঝতে সুবিধা হয়। তাছাড়া পরীক্ষায় কীভাবে ভালো করা যায় এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এই অনুষ্ঠান শুনলে আমাদের আর প্রাইভেট পড়তে হয় না।
চর কলোনি হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আফরোজা বেগম বলেন, তথ্য ও জ্ঞান প্রাপ্তিতে শহর ও গ্রামের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব বেড়েই চলছে। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি। গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে কমিউনিটি রেডিও লোকবেতারের এমন কার্যক্রম বেশ ফলপ্রসূ। এমন অনুষ্ঠান বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন।