পদ্মার ভাঙনে বিলীন মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। একদিকে নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে, অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে পদ্মার তীর। মানুষ হারাচ্ছে ভিটেমাটি, প্রকৃতি হারাচ্ছে ভারসাম্য। এ ধরনের বাস্তবতায় ভাঙন প্রবণ এ এলাকার মানুষকে দুর্যোগে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছে ‘কমিউনিটি রেডিও বিক্রমপুর’। নদীভাঙন-পরবর্তী করণীয় এবং দুর্যোগবিষয়ক সাপ্তাহিক তথ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘নদীর পাড়ের মানুষ’, ‘কালবৈশাখী’ এবং ডকুড্রামা ‘টর্নেডো’ এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে এ কমিউনিটির মানুষের মধ্যে।
নদী ভাঙনের ক্ষতি হ্রাস ও ভাঙন রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া, দুর্যোগের পূর্বাভাস, দুর্যোগপূর্ববর্তী, দুর্যোগ চলাকালীন ও দুর্যোগপরবর্তী করণীয় ইত্যাদি বিষয় আলোকপাত করা হয় ওই অনুষ্ঠানগুলোয়। ‘রেডিও বিক্রমপুর’ এর শ্রোতা, মুন্সীগঞ্জের মোল্লার চর গ্রামের মো. সবুজ হোসেন বলেন, ‘নদীর পাড়ের মানুষ’ অনুষ্ঠানটি শুনে আমরা সচেতন হয়েছি এবং এলাকাবাসী সবাই মিলে নদীপাড়ে বাঁধ দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। অনুষ্ঠানটি শুনে নদীর পাড় থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার চিন্তা করেছি। এরকম অনুষ্ঠান আরও হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
উত্তর ইসলামপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নার্গিস আক্তার বলেন, প্রোগ্রামটি শুনে নদীর পাড় থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার চিন্তা করেছি। নিজেশুনে অন্যকে জানিয়েছি। চর গ্রামের জহুরা বেগম ‘কালবৈশাখি’ ম্যাগাজিনটি সম্পর্কে বলেন, আমরা জানতাম না, কালবৈশাখির সময় কী করতে হবে। ‘রেডিওবিক্রমপুর’ এর মাধ্যমে আমরা তা জানতে পারছি। ঝড়ের ক্ষতি কমানোর বিষয়ে গণসচেতনতা, ঝড়ের আগে, ঝড়ের সময় এবং পরে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে এ অনুষ্ঠানে ধারণা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের প্রযোজক তাপস লাল চৌধুরীব লেন, প্রতিটি অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট বিষয়ের ধারণা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জনসাধারণ সচেতন হয়েছে। রেডিও বিক্রমপুরের স্টেশন ম্যানেজার হারুন অর রশীদ বলেন, এ অনুষ্ঠানগুলো শুরু থেকেই শ্রোতাদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। নদীপাড়ের অনেকেই জানতেন না, বন্যা-দুর্যোগের পর কী করতে হবে বা কোথায় গেলে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায়। কিন্তু তারা এ তথ্যগুলো রেডিও বিক্রমপুরের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জানতে পারছেন।
প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর কমিউনিটি রেডিও। কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, চরের মানুষ কিংবা পল্লীর স্বভাব কবি, দুর্যোগে লড়াই করা উপকূলবাসী অথবা সুবিধাবঞ্চিত নারী— সবাই যার যার অবস্থান থেকে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন এ কমিউনিটি রেডিও থেকে। নিজেরা অংশ নিচ্ছেন আবার উপভোগও করছেন। বাংলাদেশে খুব অল্প সময়ে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি কার্যকর হয়ে উঠেছে কমিউনিটি রেডিও। দীর্ঘস্থায়ীও টেকসই করতে কিছু সমস্যা এখনও রয়েছে। অনেকটা বিদেশি অনুদান নির্ভর পরিচালনা বলে এর স্থায়িত্ব নিয়েশঙ্কিত অনেকে। তবে স্থানীয়ভাবে সরকারি বা বেসরকারি বিজ্ঞাপন প্রচার করা নিয়ে একটি নীতিমালা হচ্ছে। সেটি হলে এ সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেডিও বিক্রমপুরসহ রেডিও পদ্মা, রেডিও নলতা, লোক বেতার, রেডিও পল্লীকণ্ঠ, রেডিও সাগরগিরি, রেডিও মহানন্দা, রেডিও মুক্তি, রেডিও চিলমারী, রেডিও ঝিনুক, কৃষি রেডিও, রেডিও সুন্দরবন, রেডিওনাফ এবং বরেন্দ্র রেডিও দেশের ১৪টি স্থানে এ ১৪টি কমিউনিটি রেডিও তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে আসছে।
বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিওর যাত্রা শুরু হয়েছে অল্প কিছু দিন আগে। তথ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমবার কমিউনিটি রেডিও পরিচালনার অনুমোদন দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর একেক রেডিও একেক সময় সম্প্রচার শুরু করে। এছাড়া চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন এবং নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় দুটি কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা প্রজ্ঞাপন জারি করে।
—আল মামুন : সাংবাদিক, লেখক