ড. এ পি জে আবদুল কালামের মৃত্যুতে গোটা ভারতবর্ষের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ গভীরভাবে শোকাহত হয়। ভারতে ঘোষণা করা হয় সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। মৃত্যুর আগে কোনো এক সময় ড. কালাম বলেছিলেন— ‘আমার মৃত্যুর পর কোনো ছুটি ঘোষণা করবে না, আমাকে যদি ভালোবাসো পারলে একদিন অতিরিক্ত কাজ করবে।’ তাঁর কথা মতো সেটাই করেছে ভারত সরকার। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ছাড়া কোনো সরকারি ছুটি ঘোষণা করেনি।
ড. কালামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রণব মুখার্জি ও নরেন্দ্র মোদি তাৎক্ষণিক শোক বার্তায় বলেন— ‘আবদুল কালামের মৃত্যুতে পুরো জাতি ও লক্ষ-কোটি বিজ্ঞানপ্রেমী আজ মর্মাহত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দেশের জন্য যা করেছেন তা আমাদের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।’
প্রণব মুখার্জি তাঁর শোক বার্তায় বলেন— ‘ড. এ পি জে আবদুল কালাম আজাদ বিজ্ঞান, প্রশাসন, শিক্ষা ও লেখায় যে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন, তার মাধ্যমেই কোটি কোটি মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
চেন্নাইয়ে ২০১৫ সালের ২৮ জুলাই একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠানে ড. কালামের প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি হাতে কাঁদছে এক শিক্ষার্থী।
নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে লিখেন— ‘একজন মহান বৈজ্ঞানিক, অসাধারণ প্রেসিডেন্ট এবং সর্বোপরি একজন প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে ভারত শোকাহত।’ ড. কালাম সাধারণ মানুষের সঙ্গ উপভোগ করতেন উল্লেখ করে মোদি আরো বলেন— ‘জনগণ এবং শিশু কিশোরেরা তাঁকে অত্যন্ত পছন্দ করতো। তিনি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসতেন এবং তাঁদের সাথেই জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কাটিয়েছেন।’
ড. কালামের মরদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন সেনা, বিমান এবং নৌবাহিনীর অফিসাররা।
টুইটারে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং লেখেন— ‘ড. কালামের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার প্রয়াণে একটি বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যা পূরণ করা কষ্টসাধ্য। আমি তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক জানাচ্ছি। তাঁর চির শান্তি কামনা করি।’
এছাড়াও পূর্ববতী একটি টুইটে তিনি লেখেন—‘ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. এ পি জে আবদুল কালামের আকস্মিক মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। পুরো একটি প্রজন্মের জন্য তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা।’
বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং আরজেডির প্রধান লালু প্রসাদ এবং তাঁর স্ত্রী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রাব্রি দেবীও ড. কালামের মৃত্যুকে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
ড. কালামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেত্রী রওশন এরশাদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পৃথক শোক বার্তায় তারা বলেন— ‘ড. এ পি জে আবদুল কালামের মৃত্যুতে পৃথিবী এক মেধাবী নেতাকে হারাল।’
চতুর্দশ দলাই লামা কালামের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন ও প্রার্থনা করে বলেন— ‘ড. কালাম শুধুমাত্র একজন বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাবিদ বা রাষ্ট্রনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন নিপাট ভদ্রলোক, সরল ও বিনয়ী।’
ভূটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ড. কালামকে ভারতীয় জনগণের রাষ্ট্রপতি বলে উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ভূটান সরকার দেশের পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি ১০০০টি বাতি প্রজ্জ্বলন ড. কালামের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।
ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সুসিলো বমবাং ইয়োধোয়োনো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী সিয়েন লুং ড. কালামের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
চলবে...