বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আবদুল কালামের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তাঁর সরলতা, তাঁর বুদ্ধিমত্তা। দেশসেরা বিজ্ঞানী হিসেবে ‘মিসাইল ম্যান’ উপাধি পেয়ে এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি সাধারণের মতোই ছিলেন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাগানময় পায়চারি করতেন। পাখিদের সঙ্গে কথা বলতেন। নিজের জ্ঞানকে কখনো তিনি নিজের মধ্যে আবদ্ধ করনেনি, করতে চানওনি। সব সময় তা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। এ জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছেন। ছড়িয়ে দিয়েছেন জ্ঞানের আলো, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বুনে দিয়েছেন স্বপ্নের বীজ। মৃত্যুর আগেও তিনি জ্ঞানের আলো ছড়াতে ছুটে গিয়েছিলেন শিলংয়ে। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বি-স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ‘লিভেবল প্ল্যানেট আর্থ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় হঠাৎ ঢলে পড়ে যান তিনি। দ্রুত তাঁকে দু’কিলোমিটার দূরের বেথেনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা ঘোষণা করেন— মারা গিয়েছেন দেশের একাদশতম রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম। বড় মাপের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ড. কালাম, হাসপাতালের থেকে এমনই জানানো হয়। ৮৪ বছর বয়সের এই মহান বিজ্ঞানী সারা জীবন জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। পৃথিবী ছেড়ে থেকে চলে গেলেন এই আলো ছড়াতে ছড়াতেই। একে বলা যেতে পাওে ‘ডিভাইন অর্ডার বা ঐশ্বরিক নির্দেশ’। একজন যোদ্ধা যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো মারা যান, ঠিক সেভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। এমন সুন্দর মৃত্যু কজনারই বা হতে পারে!
বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলী স্বপ্নচারী সাধক ড. কালাম রচিত আত্মজীবনীমূলক বই ‘উইংস অব ফায়ার’র শেষ কয়েকটি লাইন এ রকম— ‘এই গল্প শেষ হবে আমার সঙ্গেই, যেহেতু পার্থিব কিছুই আমার নেই। আমি কোনো কিছুরই মালিক নই, কিছুই সৃষ্টি করিনি, অধিকারী নই কোনো কিছুর— না পরিবার, না পুত্র-কন্যার। …আমার প্রপিতামহ আবুল, আমার পিতামহ পাকির, আমার পিতা জয়নুল আবেদিন— এর ব্লাড লাইন হয়তো শেষ হবে আবদুল কালামে (অকৃতদার) এসে। কিন্তু আল্লাহর মহিমা কখনো থামবে না, যেহেতু তা চিরন্তন।’ না। রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোটেই শেষ হয়ে যাননি। কখনো যাবেনও না। তাঁর ‘ব্লাড লাইন’ না থকালেও তিনি তাঁর কর্মে উজ্জল থাকবেন, মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে চিরদিন।
চলবে...