১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। ১৩২৭ সালের ২০ চৈত্র। মঙ্গলবার রাত আটটা। বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ জেলার বাংলাদেশের আর দশটি সাধারণ গ্রামের মতো গাছপালা, জঙ্গলঘেরা, নদীমাতৃক, গ্রামবাংলার এক নিভৃত কোণে টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। এই গ্রামেরই এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার— শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়েরা খাতুনের ঘরে আসে নতুন এক অতিথি। কোল আলো করে আসা সেই শিশুটির নাম রাখা হয় শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আদর করে সবাই খোকা বলেই ডাকে। মা-বাবার চোখে রাজ্যের স্বপ্ন— এই খোকা একদিন জয় করবে পুরো পৃথিবী।
ঘুম ঘুম চোখে খোকা একবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, আবার চোখ ফিরিয়ে এনে মায়ের বুকের ভেতর মুখ গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। বাইগার, মধুমতী নদী থেকে শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে যায় তাঁকে। মা বুঝতে পারেন, অনুভ‚তি প্রকাশ করতে পারেন না। ছেলের মাথাভর্তি কালো চুলে তাঁর নরম আঙুল বোলান। পরপর দুই মেয়ের জন্মের পর চৈত্রমাসে খোকার জন্ম হলে সারা বাড়িতে হৈ চৈ পড়ে যায়। আনন্দে আত্মহারা খোকার নানা, বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার ধুম লাগিয়ে দেন তিনি।
শেখ বংশে ছেলে জন্মায় কম। পরপর দুুই মেয়ের জন্ম হলেও একটা ছেলের বড় স্বপ্ন ছিল মায়ের। তাই জন্মের পর প্রথমে খোকাকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন মা সায়েরা খাতুন। বাড়ির সবাই তাঁর কান্না দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছিল। তার বড় বোনদের কোনো ছেলে ছিল না। অথচ তাঁর কোলেই জন্মাল ছেলে সন্তান— এ যে কত আনন্দের, কত গৌরবের— তিনি ছাড়া আর কেউ তা বুঝতে পারবেন না। চার মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন তৃতীয়। তাঁর বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজবোন আছিয়া বেগম, সেজবোনের নাম হেলেন ও ছোটবোন লাইলী; আর তাঁর ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।
চলবে…